প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান ও তরুণদের প্রতি অনুপ্রেরণামূলক  বক্তব্য 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে দেশের চলার পথে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ আসবে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজস্ব শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। তিনি তরুণদেরই এই কাজে নেতৃত্ব দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ও তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণামূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট ১২ জন তরুণকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও রয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে শুরুতে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং পুরস্কার প্রাপ্ত সকল তরুণকে তার প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, “আজ আমরা তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করছি। এটিই আমাদের জাতির চালিকাশক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যখন একটি দেশের যুবসমাজ সক্রিয় থাকে, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারে না।”

ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি আজ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। তরুণরা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই তরুণরাই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণরাই যুগে যুগে এ দেশের ইতিহাস রচনা করেছে।”

প্রধান উপদেষ্টা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, কখনো তা জনস্বাস্থ্যের সংকট, কখনো শিক্ষার অপর্যাপ্ত সুযোগ, আর কখনো পরিবেশগত বিপর্যয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এগুলোকে আমাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এ কাজেও আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে।”

তিনি স্বেচ্ছাসেবাকে কেবলমাত্র আর্তমানবতার সেবাই নয়, বরং আত্ম-উন্নয়ন, চরিত্র গঠন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের এক আদর্শ মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

ড. ইউনূস তরুণদেরকে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই না থেমে থেকে সমাজের নীতি নির্ধারক, উদ্ভাবক এবং পরিবর্তনের স্থপতি হিসেবে গড়ে উঠার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আজকের এই পুরস্কার কেবল একটি স্বীকৃতি নয়, এটি তোমাদের জন্য একটি উদাত্ত আহ্বান, তোমরা আরও সাহসী হও, আরও নেতৃত্ব দাও এবং সমাজের কল্যাণে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করো।”

তিনি তরুণদের ছোট ছোট প্রচেষ্টারও বিশাল গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে তোমাদের একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাজারো শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তোমাদের সামান্য প্রচেষ্টা দেশের শিক্ষার মানকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে।”

প্রধান উপদেষ্টা স্বীকার করেন যে স্বেচ্ছাসেবা বা মহৎ উদ্যোগের পথ মসৃণ নয় এবং এতে সময়, অর্থ ও মানসিক চাপের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।